
প্রতিবেদক: মাঠপর্যায়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, হয়রানি ও অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, উচ্চ টার্নওভার করহার, ভুয়া মামলা, বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা ও সার্ভার সমস্যার কারণে নিয়মিতভাবে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রথমবারের মতো এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে সরাসরি অভিযোগ তুলে ধরেন তাঁরা।
চামড়া শিল্পে সংকট জেনিস সুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির খান বলেন, “চামড়াশিল্পকে বনসাই গাছের মতো ছোট করে রাখা হয়েছে। টার্নওভার করের হার বৃদ্ধি আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা লাভ না করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।”
ভুয়া মামলা ও জবাবদিহির অভাব নাসির খান অভিযোগ করেন, ভুয়া মামলায় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়, কিন্তু দায়ী কর্মকর্তাদের কোনো জবাবদিহি নেই।
কর সুবিধার ঘাটতি বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, আগে আয়কর আইনে তিন বছরের মধ্যে সুদ পরিশোধের সুযোগ ছিল, কিন্তু ২০২৩ অর্থবছরে তা বাতিল করা হয়েছে।
ভ্যাটের নামে হয়রানি বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান অভিযোগ করেন, “বারবার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম পরীক্ষা করা হয়। এতে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে যায়।” তিনি এনবিআর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ আনেন।
বন্দরে গাফিলতি যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, বেনাপোলে কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে পচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্বীকার করেন এবং আশ্বাস দেন যে সমস্যাগুলো সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু দৃষ্টান্ত তৈরি হলে এ ধরনের কাজ কমে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা নির্দেশ অমান্য করেন। ব্যবসায়ীদের আইন সম্পর্কে সচেতন হয়ে প্রয়োজনে সরাসরি অভিযোগ জানাতে আহ্বান জানান তিনি।
চেয়ারম্যান জানান, ব্যবসা সহজ করতে কিছু নিয়ম সংশোধন করা হবে। করদাতারা তাঁদের আয় থেকে কর প্রদান করছেন, কিন্তু এর বিনিময়ে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না—এ বিষয়েও তিনি একমত হন।
নন–বন্ডেড রপ্তানিকারকেরা ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে কাঁচামাল ছাড় করতে পারবেন।
হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধার আওতায় আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্ড প্রক্রিয়ার পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ করা হবে, যাতে প্রতিবছর অডিটের সংখ্যা কমানো যায়।
কর প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআর বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াবে।
এনবিআর চেয়ারম্যানের ভাষায়, আমরা চাই ব্যবসা সহজ হোক, কেউ বৈষম্যের শিকার না হোক।