যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে, বাড়ছে নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে গত আগস্টে। এর আগের সাত মাসে (জানুয়ারি–জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার শীর্ষ পাঁচ রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৪৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। শুধু জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ডলারের, প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, এই সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৪,৫৮০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।

গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করে, যা ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়। নতুন হার অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, ভারতের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ এবং চীনের পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।

রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৯৪৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চীন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ সময় দেশটি ৬৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কম। শুধু জুলাই মাসে চীনের রপ্তানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। অন্যদিকে, ভারত ৩৩১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে (প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ) এবং ইন্দোনেশিয়া ২৬৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে (প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ)।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, চীনের হারানো অর্ডারের একটি অংশ বাংলাদেশে আসছে এবং সামনের মৌসুমে তা আরও বাড়তে পারে। তবে এর মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জও দেখা দিয়েছে। অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, অনেক মার্কিন ক্রেতা বাড়তি শুল্কের একটি অংশ বহন করতে রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ দিচ্ছেন। এমনকি মিসর ও হাইতির মতো কম শুল্কযুক্ত দেশে উৎপাদন ইউনিট স্থাপনের পরামর্শও দিচ্ছেন তারা।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, নতুন ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আসছে। তবে কম দামের কারণে অনেকে অর্ডার নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, “ক্রেতাদের পাল্টা শুল্ক ভাগাভাগির প্রস্তাবে সাড়া না দিতে আমরা আমাদের সদস্যদের বলেছি, কারণ আমাদের মুনাফার হার খুবই সীমিত।”

গত বছর (২০২৪ সালে) বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। তবে ২০২৩ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি কমে গিয়েছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। উদ্যোক্তাদের মতে, চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অর্ডার বাড়ছে, কিন্তু ক্রেতাদের চাপ, মূল্য প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য দেশের শুল্ক সুবিধা—এসবই ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।