দারিদ্র্য ও ঋণের চাপ, রেমিট্যান্সই এখন অর্থনীতির সাহারা

প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক অস্থির মোড়ে দাঁড়িয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে ৩.৯৭%, যা এক দশকের মধ্যে অন্যতম ন্যূনতম। কঠোর মুদ্রানীতি, আমদানি সংকোচন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা মূলত এ প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে দায়ী। বিনিয়োগ স্থবির এবং নির্মাণ খাতের ধীরগতির কারণে কর্মসংস্থানও সীমিত। চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ শতাংশ ঠিক করা হলেও তা অর্জনে সন্দেহ রয়েছে।

দারিদ্র্য বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। দেশের দারিদ্র্য ২৮%, যেখানে চরম দারিদ্র্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৪%—প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রকৃত মজুরি হ্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মহামারি-পরবর্তী ধাক্কা এর মূল কারণ। পরিবারগুলোর আয়ের অর্ধেকের বেশি খাদ্যে চলে যাচ্ছে, ফলে দরিদ্ররা ঋণের ওপর নির্ভরশীল।

মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও ক্রয়ক্ষমতা এখনও ফিরছে না। আগস্টে মূল্যস্ফীতি ৮.২৯%, যা ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৬০% এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৮.৬০%। তবে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি এখনো ৯.৭৭%—যা বাস্তব ক্রয়ক্ষমতা প্রভাবিত করছে। মজুরি বৃদ্ধির হার ৮.১৫%, তবে মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম হওয়ায় জীবনযাত্রার মানে তেমন উন্নতি আসছে না।

খেলাপি ঋণের চিত্রও উদ্বেগজনক। জুন ২০২৫ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ৫.৩ ট্রিলিয়ন টাকা, মোট ঋণের ২৭.০৯%। এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। বিশেষ করে কিছু ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে কিছু ইতিবাচক সংকেতও দেখা যাচ্ছে। প্রবাসী আয় আগস্টে ২৪২ কোটি ডলার, বছরে প্রায় ৯% বৃদ্ধি। রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৪০ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। রপ্তানি আয় আগস্টে সামান্য কমলেও চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে মোট রপ্তানি ৮৬৯ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১০.৬১% বেশি।

অর্থনীতির অন্যান্য সূচকেও মিশ্র চিত্র দেখা যায়। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬.৫২%, সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪.৫১%, এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ০.৬৯%। রাজস্ব আদায় জুলাইয়ে ২৪% বেড়েছে, তবে টেকসই ভিত্তি এখনও তৈরি হয়নি। বৈদেশিক ঋণ ১০৪.৮ বিলিয়ন ডলার, যার ৮১% সরকারি খাতের।