
প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসায়িক সংকট কিংবা মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় ব্যবসা চালু ও চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে। এ ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর হবে এবং শুরুতে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। তবে সুবিধা পেতে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। একইভাবে এককালীন ঋণও পরিশোধ করা যাবে, যার জন্য গ্রাহক এক বছর সময় পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। এতে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তারা খেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরাতে নতুন সুবিধা চালু করা হয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার কমে যাওয়া—এসব কারণেও অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাও এই সুবিধা পাবে।
৩০ জুন পর্যন্ত বিদ্যমান খেলাপি ঋণের ওপর কমপক্ষে ২% নগদ জমা দিতে হবে।ঋণ নিয়মিত হলে ১০ বছর মেয়াদে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ থাকবে।শুরুতে ২ বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে।আগে তিনবার বা তার বেশি পুনঃতফসিল করা থাকলে অতিরিক্ত ১% জমা দিতে হবে।কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান পুনরায় খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে।জালজালিয়াতি বা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের সম্ভাবনা বিবেচনায় পুনঃতফসিল করতে হবে। সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে সোলেনামা চুক্তি সই করতে হবে, যাতে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখা যায়।
সাবেক এবিবি চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেছেন, অনেক ভালো ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছেন। কেউ বিদেশে আছেন, কেউ কারাগারে। এরা দেশের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে অবদান রাখতে পারেন। এই সুবিধা তাঁদের ব্যবসায় ফেরার সুযোগ দেবে। তিনি মনে করেন, স্বাভাবিক সময়ে এ ধরনের ছাড় ব্যাংকের জন্য চাপের হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক।