এলসির ন্যূনতম দর বাতিল নতুন নীতিতে কঠোর পরিবেশ শর্ত

প্রতিবেদক: পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দর বা নগদ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা থাকছে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় এ শর্ত তুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা যেকোনো পরিমাণ পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারবেন।

২০২৫-২০২৮ মেয়াদের জন্য নতুন আমদানি নীতি আদেশে এই নির্দেশনা রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খসড়া তৈরি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের মতামত নিয়েই খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান খসড়ার মূল বিষয়গুলো বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে উপস্থাপন করবেন। এরপর উপদেষ্টার মতামত যুক্ত করে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

বাংলাদেশ আগামী ১৪ মাসের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হয়ে যাবে। এ কারণে নতুন আমদানি নীতিতেও এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান আমদানি নীতি ২০২১-২০২৪ মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের জুনে। নতুন আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো আদেশই বহাল থাকে।

নতুন নীতিতে কিছু বিশেষ দিক রাখা হয়েছে। যেমন—হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে হর্নের মাত্রা সর্বোচ্চ ১০০ ডেসিবেল নির্ধারণ। খাদ্যদ্রব্য আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদিত ল্যাবরেটরির মাধ্যমে মান যাচাই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো ইথাইলিন ও প্রোপাইলিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যদিও এজন্য বিস্ফোরক পরিদপ্তর ও বিপিসির অনুমতি নিতে হবে। পাম অলিন আমদানিতে বিএসটিআইয়ের সনদ বাধ্যবাধকতা শিথিল করার প্রস্তাবও রয়েছে।

সম্ভাব্য নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ, চিংড়ি, জীবিত শূকর ও শূকরজাত পণ্য, পপি বীজ, পোস্তদানা, কৃত্রিম সর্ষের তেল, পুরোনো ইলেকট্রনিকস, হাইড্রোলিক হর্ন, ৭৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ উৎপাদনকারী হর্ন, ডিডিটি ও হেপ্টাক্লোরসহ বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক, পলিথিন-প্রোপাইলিন ব্যাগ এবং দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত থ্রি-হুইলার রয়েছে। এছাড়া অশ্লীল ও নাশকতামূলক প্রকাশনাও আমদানি করা যাবে না।

তবে কিছু পণ্য শর্তসাপেক্ষে আমদানি করার সুযোগ থাকবে। যেমন—সাড়ে ৪ সেন্টিমিটারের কম ব্যাসের কারেন্ট জাল, ৫ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি, ৩ বছরের বেশি পুরোনো ও ১৬৫ সিসির ঊর্ধ্বে মোটরসাইকেল, এলএনজি, শিশুদের খেলনা (সনদ বাধ্যতামূলক), বেসামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার এবং পুরোনো জাহাজ (বিষাক্ত বর্জ্যবিহীন প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন)।

চলচ্চিত্র আমদানির ক্ষেত্রেও নতুন শর্ত থাকছে। যৌথ প্রযোজনার বাইরে উপমহাদেশীয় ভাষার কোনো চলচ্চিত্র আমদানি করা যাবে না। তবে সাফটাভুক্ত দেশগুলোয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র রপ্তানির বিপরীতে সমসংখ্যক চলচ্চিত্র আমদানির সুযোগ থাকতে পারে।