প্রবাসী আয়ের ৭০ শতাংশ এখন ডিজিটাল মাধ্যমে আসে

প্রতিবেদঃ বাংলাদেশের দেড় কোটির বেশি প্রবাসী প্রতি বছর তাঁদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠান। ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রসারের ফলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আগের তুলনায় অনেক সহজ ও দ্রুত হয়েছে। বক্তাদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ব্লকচেইন ও স্টেবলকয়েন ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করা গেলে বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুরের ভাওয়াল রিসোর্টে ‘বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের পরিবর্তিত চিত্র ও উদীয়মান সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ দিনব্যাপী কর্মশালায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন। কর্মশালায় তিনটি অধিবেশন ছিল। প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য দেন বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিকাশের বাণিজ্যিক বিভাগের প্রবাসী আয় শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাহিদুল আহসান।

বিকাশের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ বলেন, আগে ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বিদেশে গিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের হিসাব ও লেনদেন বাড়াতে কাজ করতেন। এখন এমএফএস ও বিভিন্ন অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি ডিজিটাল হয়েছে। এ কর্মশালা থেকে আগামী এক বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ জাহিদুল আহসান বলেন, বিশ্বের ১৭৬টি দেশে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি বসবাস করেন। তবে সব দিক ইতিবাচক নয়; এখনও ৫০ শতাংশের বেশি প্রবাসী শ্রমিক অদক্ষ। ফলে প্রত্যাশিত হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না।

প্যানেল আলোচনায় ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহরিয়ার জামিল বলেন, আগে রেমিট্যান্স মানেই ছিল ‘ক্যাশ ওভার দ্য কাউন্টার’। গ্রাহকদের ব্যাংক বা এনজিও কার্যালয়ে গিয়ে টাকা তুলতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল। বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ রেমিট্যান্স ডিজিটাল মাধ্যমে আসে, যদিও নগদ গ্রহণের প্রক্রিয়া পুরোপুরি কমে যায়নি।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান জহুরুল করিম চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে তদারকি ও নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়া অনেক সময় ব্যাংকের রেমিট্যান্স গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিকাশের বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক জয়ন্ত সেন। তিনি জানান, রেমিট্যান্সনির্ভর পরিবারের ৯২ শতাংশ এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং এদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ইন্টারনেট সংযুক্ত।

তৃতীয় অধিবেশনে ফিনটেক স্টার্টআপ ট্যাপট্যাপ সেন্ডের হেড অব গ্রোথ সুদর্শন শুভাশীষ দাস বলেন, এখন মানুষ টাকা পাঠাতে চান দ্রুত, সহজ ও কম সময়ে। এআই রেমিট্যান্স প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু নতুন সুবিধা এনে দিয়েছে। কর্মশালায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের নন-রেসিডেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের প্রধান খন্দকার আসিফ খালেদসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।