ব্যবসার নৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী

প্রতিবেদক: স্যামসন এইচ চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাণিজ্যে সততার অনুকরণীয় মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। ব্যবসায় মুনাফার চেয়ে তিনি পণ্যের গুণমানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতেন এবং ব্যবসাকে সমাজকল্যাণের মাধ্যম হিসেবে মনে করতেন। দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ মন্তব্য করেন। ‘স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং বণিক বার্তা।

স্মরণসভায় বক্তারা স্যামসন এইচ চৌধুরীর জীবন, কর্ম ও উত্তরাধিকারের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এবং এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির।

স্মৃতিচারণায় আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে বহুবার কথা হয়েছে স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি এবং মরহুম লতিফুর রহমান—উভয়েই ব্যক্তিস্বার্থের পরিবর্তে শিল্প ও দেশের জন্য কাজ করতেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্যামসন এইচ চৌধুরী ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে মানদণ্ড স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণীয়। আজকের ব্যবসা পৃষ্ঠপোষকতায় বাধ্য, কিন্তু ওনার চিন্তাভাবনা আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, “স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক শুরু হয় ট্রান্সপারেন্সি বাংলাদেশের ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে। ২০০০ সালে ডেইলি স্টার থেকে প্রথম বিজনেস অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার সময় তিনি ছিলেন সৎ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার প্রতীক। সত্যিকার শ্রদ্ধা জানাতে হলে তার সততাকে ধারণ করতে হবে।”

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ বলেন, “দীর্ঘদিনের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে স্যামসন এইচ চৌধুরীই আমাদের কাছে ছিলেন। সরকারি কাজ পাওয়া সত্ত্বেও, তিনি ব্যক্তি উপদেষ্টা থাকায় কোনো সুবিধা পাননি।”

এমসিসিআই-এর সাবেক মহাসচিব সি কে হায়দার বলেন, “স্যামসন এইচ চৌধুরী ছিলেন প্রতিভাবান উদ্যোক্তা। ছোটখাটো বিষয়কেও তিনি গুরুত্ব দিতেন। তাকে স্মরণ করা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়।

আলোচনায় অংশ নেওয়া অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, “আমার বাবা এবং উনি বিভিন্ন সংগঠনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমাদের কোম্পানির স্বাধীন পরিচালকও ছিলেন। তাঁর পুকুরে মাছ চাষ করা হতো শ্রমিকদের খাওয়ার জন্য—এটা শুনে ইতালির বায়ারও অবাক হয়েছিলেন।”

পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্যে তপন চৌধুরী বলেন, বাবা যেটা বলার ছিল, সেটা বলতেনই। সেই সাহস এখন আমাদের নেই।” প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর নাতনি সঞ্চিয়া চৌধুরী বলেন, পোশাক খাতে আমরা প্রথম যারা নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করেছিলাম। শুরুতে অনেকের হাসাহাসি হয়েছিল, কিন্তু ২০০৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পুরস্কৃত হয়েছি।

স্বাগত বক্তব্যে কামরান টি রহমান বলেন, দূরদর্শী নেতা ও জাতি গঠনে অগ্রদূত ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, সামাজিক দায়বোধ পালনের মাধ্যমও। দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ বলেন, “প্রথম প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের স্মরণে এ আয়োজন। তাঁরা শুধু বিত্ত তৈরি করেননি, রেখেছেন মানুষের জন্য।

অনুষ্ঠানের সমাপনীতে পরিবার, এমসিসিআই ও বণিক বার্তার প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মশতবর্ষের প্রতীকী প্রদীপ প্রজ্বালন ও কেক কাটেন।