মার্কিন শীর্ষ ধনীদের সম্পদ এক ত্রৈমাসিকেই বেড়েছে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার

প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রে ধনীদের সম্পদ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। বুধবার প্রকাশিত ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) নতুন তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক শেয়ারবাজারের উত্থানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন বড় বিনিয়োগকারীরা। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) মধ্যে দেশটির শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ বেড়েছে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লাখ কোটি মার্কিন ডলার।

ফেড জানিয়েছে, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১১৩ ট্রিলিয়ন বা ১১৩ লাখ কোটি ডলারে। বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক শেষে এই পরিমাণ ছিল ১০৮ ট্রিলিয়ন বা ১০৮ লাখ কোটি ডলার। এদের প্রত্যেকেরই ন্যূনতম নিট সম্পদ ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডলারের বেশি।

সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধনীদের এই সম্পদবৃদ্ধি নতুন কিছু নয়। ২০২০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ ৪০ ট্রিলিয়ন বা ৪০ লাখ কোটি ডলার বাড়ছে।

ফেডের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সম্পদ বাড়লেও সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে উচ্চধনীদের সম্পদ। দেশটির শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ এক বছরে বেড়েছে ৪ লাখ কোটি ডলার বা ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এ গোষ্ঠীর মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ কোটি ডলারে, যা একটি রেকর্ড।

আরও ওপরের স্তরে থাকা শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ গত এক বছরে বেড়েছে ১০ শতাংশ। মহামারির পর থেকে এই শ্রেণির সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

যদিও সম্প্রতি তাঁদের সম্পদ দ্রুত বেড়েছে, শতাব্দীজুড়ে উচ্চবিত্তদের মোট সম্পদের অনুপাত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল দেশটির মোট গৃহস্থালি সম্পদের ২৯ শতাংশ। ২০০০ সালে এই হার ছিল ২৮ শতাংশ। একই সময়ে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল ৬৭ শতাংশ সম্পদ এবং বাকি ৯০ শতাংশ মানুষের দখলে ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ।

ফেড জানায়, এ বছর শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি ছিল শেয়ারবাজার। গত এক বছরে শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে থাকা করপোরেট শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য ৩৯ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৪৪ লাখ কোটি ডলারের ওপরে উঠেছে। দেশটির মোট করপোরেট শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৮৭ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে এই গোষ্ঠী।

যুক্তরাষ্ট্রে অতি ধনীদের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। আলট্রাটার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন কোটি ডলার বা তার বেশি সম্পদ থাকা নাগরিকদের সংখ্যা ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছর বৃদ্ধি ছিল ২১ শতাংশ। বর্তমানে দেশটিতে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৯০ জন, যা বিশ্বের মোট অতি ধনীর ৪১ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, শীর্ষ ধনীদের সম্পদ দ্রুত বৃদ্ধির ফলে বাজার অর্থনীতিতে বৈষম্য বাড়ছে। মুডিস অ্যানালিটিকসের অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডি জানান, চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোক্তা ব্যয়ের ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ করেছেন শীর্ষ ধনীরা। ১৯৮৯ সাল থেকে গত ৩৬ বছরে এটাই সর্বোচ্চ হার।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মূলত “K-আকৃতির অর্থনীতি” নির্দেশ করে, যেখানে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি সমানভাবে ঘটে না। সিএনবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সীমিতসংখ্যক উচ্চসম্পদশালী গ্রাহকের ওপর অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা বড় ঝুঁকি তৈরি করছে।

মার্ক জ্যান্ডি সতর্ক করে বলেছেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘস্থায়ী বা গভীর পতন হলে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগতে পারে। বিশেষত অতি ধনীদের ওপর অর্থনীতির নির্ভরশীলতা এখন এক ধরনের ঝুঁকি। বর্তমানে তাঁরা শেয়ারের দাম বাড়তে দেখে খরচ করছেন। কিন্তু বাজার হঠাৎ পড়ে গেলে ব্যয় কমিয়ে দেবেন তারা, যা দুর্বল অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হতে পারে।