
প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারসহ দশটি শিল্পগোষ্ঠীর বাইরে পাঠানো অর্থ উদ্ধারের জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে। এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এমন কাজ করার জন্য সাতটি স্বনামধন্য আইন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা যেতে পারে যারা বিদেশে থাকা পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম বলে বিবেচিত। অর্থ উদ্ধার করলে চুক্তিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কমিশন হিসেবে কিছু অংশ নেবে।
আজ সোমবার অনুষ্ঠিত সভায় এসব নির্দেশনা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভায় গভর্নরের উপদেষ্টা ফারহানুল গনি চৌধুরী, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর নির্বাহী পরিচালক মফিজুর রহমান খান চৌধুরী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিএফআইইউ জমা করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধমূলক অর্থ লেনদেনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এছাড়াও দশটি শিল্পগোষ্ঠীর নাম এবং তাদের মাধ্যমে গলে যাওয়া অর্থের গন্তব্য কোথায় গেছে—সেগুলোও উপস্থাপন করা হয়। উল্লেখিত গোষ্ঠীর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, জেমকন, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও আরামিটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নাম আছে।
সভায় সেগুলো কীভাবে বিদেশে পাঠানো হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া বিশ্লেষণসহ অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকেও অনুরোধ করে এসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে যাতে বিদেশ থেকে দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পদ উদ্ধার করা যায়।
সভা শেষে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পদ পুনরুদ্ধার সংস্থার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবে এবং অন্যান্য ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। তারপর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মতিউল হাসান জানান, যে সমস্ত অর্থ বিদেশে গেছে সেগুলো ফিরিয়ে আনতেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নেওয়া হবে; তারা টাকা আনতে পারলে কমিশন নেওয়া হবে—এটাই প্রস্তাব। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকগুলোকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, যদি কোনো স্থানীয় বা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান থাকে যারা এ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে, তাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
চূড়ান্তভাবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হলে তারা প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে নির্ধারণ করবে কোন সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব এবং কোনটি নয়—তার পরই উদ্ধারের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।