পি কে হালদারের কেলেঙ্কারি ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে

প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের কিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান সমস্যায় ভুগছে, যার কারণে গ্রাহকেরা তাঁদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। বিশেষ করে চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সাইফুল আলম বা এস আলমেরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৯টি এনবিএফআই-এর নিবন্ধন সনদ বা লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও জামানতের অনুপাত খুব কম হওয়ায় তাদের পুনঃস্থাপন সম্ভব নয় বলে ধারণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসসহ অন্যান্য উপদেষ্টা ও সরকারি কর্মকর্তারা। সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের পথে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে: পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), এফএএস ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং প্রিমিয়ার লিজিং। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে, যা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের শোধে ব্যবহার হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ৯টি প্রতিষ্ঠানে মোট আমানত রয়েছে ১৫,৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীর অংশ ৩,৫২৫ কোটি টাকা, এবং বাকি ১১,৮৪৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের। ব্যক্তি আমানতকারীদের মধ্যে সর্বাধিক টাকা আটকা পড়েছে পিপলস লিজিং-এ, যার পরিমাণ ১,৪০৫ কোটি টাকা। এর বাইরে আভিভা ফাইন্যান্সে ৮০৯ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ৬৪৫ কোটি এবং প্রাইম ফাইন্যান্সে ৩২৮ কোটি টাকা আটকা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ২০টি এনবিএফআই বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ১১টি প্রতিষ্ঠান পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা জমা দেওয়ায় তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৫টি এনবিএফআই-এর খেলাপি ঋণ ২৭,১৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৩২ শতাংশ।

পেশাগতভাবে আলোচিত ব্যক্তি পি কে হালদারের মাধ্যমে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়মের ফলে খাতের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়েছে। পি কে হালদারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বিবেচিত এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন আভিভা ফাইন্যান্স ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি ছিলেন। উভয় প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে বন্ধের তালিকায় রয়েছে। পি কে হালদারের কর্মকাণ্ডের পর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোতেও অনিয়মের ছোঁয়া পৌঁছে যায়, যার কারণে দেশের আর্থিক খাত এখন গভীর সমস্যার মুখে দাঁড়িয়েছে।