নিতাইগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায় মন্দা: করপোরেট আগ্রাসন ও অবকাঠামো সমস্যা বড় বাধা

প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা নিতাইগঞ্জ একসময় দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম হিসেবে পরিচিত ছিল। আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, ভোজ্যতেলসহ নানা খাদ্যপণ্য ও গবাদিপশুর খাদ্য এখান থেকে দেশের ৪০টির বেশি জেলায় সরবরাহ হতো। প্রতিদিন লেনদেন হতো কয়েক শ কোটি টাকার। নৌ ও সড়কপথের সুবিধার কারণে মালামাল সহজেই ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছাত।

কিন্তু বর্তমানে নিতাইগঞ্জের সেই ব্যস্ততা অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। বহু মিলকারখানা বন্ধ, গুদাম ফাঁকা এবং ক্রেতার উপস্থিতি কম। সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রাকে আটা–ময়দা তুলছেন শ্রমিকরা, কেউ ঠেলাগাড়িতে মাল আনছেন। তবে কর্মচাঞ্চল্য আগের মতো নেই। জয় ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ বাবু বলেন, “আগে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে মাল লোড-আনলোড হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদেশ থেকে গম, চিনি, সয়াবিন ইত্যাদি আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত পণ্য সরাসরি সুপারশপ ও পরিবেশকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে নিতাইগঞ্জের পাইকাররা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। ভাই ভাই ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক পরিতোষ সাহা বলেন, “নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ছিল সোনালি সময়। এখন দিনে ৩০–৪০ ট্রাকও আসে না।”

একসময় নিতাইগঞ্জের ব্যাংকগুলোতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো, এখন তা অর্ধেকে নেমে গেছে। ধস নামার কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। শ্রমিকদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় চলে গেছেন। খাজা গরীবে নেওয়াজ লবণ মিলের মালিক পুলক দেওয়ান বলেন, “আগে পাঁচজন শ্রমিক থাকলে কাজ চলত, এখন দুজন দিয়েই চালাতে হয়।”

জানজট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং ডলার সংকটের কারণে ব্যবসা দুর্বল হয়েছে। এখানে থাকা ৭২টি ফ্লাওয়ার মিলের অর্ধেকই বন্ধ, বাকিগুলোও সঠিকভাবে চলছে না। ওয়াজেদ আলী বাবুল বলেন, “নিতাইগঞ্জের অস্তিত্ব টিকবে কিনা সন্দেহ।”

নিতাইগঞ্জ শুধু একটি বাজার নয়, এটি নারায়ণগঞ্জের অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রতীক। ব্যবসায় ধস নামায় স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং একটি ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী বিকাশ দাস বলেন, “সরকারি সহায়তা না মেলে নিতাইগঞ্জের নাম হয়তো ভবিষ্যতে শুধু বইয়ে পড়বে।” নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, “দুই শতকের ঐতিহ্যের পাইকারি মোকামটি বাঁচাতে সরকারকে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।”