
প্রতিবেদক: বিশ্বের প্রায় সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী চলাচলের পাশাপাশি পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হয়। যাত্রীরা টার্মিনাল হয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন, কিন্তু পণ্য পরিবহনের প্রক্রিয়াটি কিছুটা আলাদা। কোনো পণ্যের চালান বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তা সঙ্গে সঙ্গে বিমানে তোলা বা খালাস করা হয় না। শুল্ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য যেসব স্থানে পণ্য রাখা হয়, সেই গুদাম বা এলাকা ‘কার্গো ভিলেজ’ নামে পরিচিত।
গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ মালামাল ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
পণ্য পরিবহনের তিনটি পথ রয়েছে—স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথ। আকাশপথে সাধারণত তুলনামূলকভাবে হালকা ও জরুরি পণ্য যেমন তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ফলমূল, শাকসবজি, পচনশীল পণ্য এবং মেশিনপত্র আমদানি ও রপ্তানি হয়। বিশ্বখ্যাত কুরিয়ার সার্ভিস ডিএইচএলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দলিলপত্রও দ্রুত আসে। এসব পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যেসব স্থানে রাখা হয়, সেই জায়গাই কার্গো ভিলেজ।
অনেক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স থাকে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য পৃথক কার্গো ভিলেজ রয়েছে। আজ যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, তা আমদানি কমপ্লেক্সে। এখানে শুল্কায়ন ও খালাসের অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন পণ্য রাখা ছিল।
কার্গো ভিলেজে পণ্য থাকে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া, জাহাজীকরণ বা খালাসের অপেক্ষায়। শুল্ক প্রক্রিয়া শেষ হলে আমদানিকারক বা তাঁর প্রতিনিধি পণ্য বুঝে নেন। এসব পণ্য কত দিন কার্গো ভিলেজে থাকবে, তা নির্ভর করে প্রক্রিয়ার গতির ওপর। পচনশীল পণ্য সাধারণত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খালাস অথবা জাহাজীকরণ করা হয়। অনেক তৈরি পোশাক মালিক দ্রুত পণ্য বিদেশে পাঠাতে বিমানযোগে পাঠান, ফলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই পণ্য গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
অন্যদিকে, কার্গো বিমানে জায়গা সংকট থাকলে কয়েক দিন পণ্য অপেক্ষমাণ থাকে। এ সময় রপ্তানিকারকেরা জায়গার ভাড়া দিয়ে পণ্য গুদামে রাখেন। আবার আমদানিকারকেরাও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে পণ্য রেখে দিতে বাধ্য হন। এখানে শুল্ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ও দলিলপত্রও থাকে।
অগ্নিকাণ্ডে শত শত টন আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন আমদানিকারকেরা। বিমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেলেও সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। বেবিচকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরই প্রকৃত ক্ষতি ও পুনরায় কার্গো কমপ্লেক্স চালুর সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা যাবে।
আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল বলেন, এই ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ধরনের ক্ষতি হলো। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য পুড়েছে, তা আগুন নেভার পরই জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী বিমা দাবি ও অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, তাঁদের নমুনা বা স্যাম্পল পণ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের আগুন লাগা এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। এতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুরক্ষা শ্রেণি অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও আছে।